, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


১৬৬ বছর পর নিজ ঘরে ফিরলো গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়

  • আপলোড সময় : ০১-০২-২০২৪ ০৪:০৬:১৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০২-২০২৪ ০৪:০৬:১৮ অপরাহ্ন
১৬৬ বছর পর নিজ ঘরে ফিরলো গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়
খালিদ সাইফুল, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: গত সেপ্টেম্বরে মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের ৪র্থ জেনারেশনের রতন কৃষ্ণ মুখার্জী নামের এক উত্তরাধিকার কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ড-রুম থেকে জমিজমার মামলা সংক্রান্ত নথি তুলতে এসেছিলেন। আদালতে আসা বিচার-প্রার্থীদের এই বিড়ম্বনার বিষয়টি বর্তমান কুষ্টিয়া সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব রুহুল আমিন ও অন্যান্য বিচারকগণের নজরে আসে। কিভাবে এই দীর্ঘতর বিড়ম্বনার স্থায়ী সমাধান করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহন করেন। সেই উদ্যোগের ধারাবাহিক কর্মকান্ডের সর্বশেষ ফলাফল স্বরূপ দীর্ঘ ১৬৬ বছর ধরে কুষ্টিয়া আদালতের রেকর্ড-রুমে পড়ে থাকা ৫হাজার ৪৯টি মামলার নথি ফিরে পেলো তার আপন ঠিকানা মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ড রুমে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়  প্রতিবেশী প্রাণ চাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মেহেরপুরের মুন্সেফি আদালতে মামলা করেছিলেন যে মামলার নম্বর ছিলো দেওয়ানি -২২৪/১৮৫৮। মামলাটিতে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য শুনানী শেষে আদালত ২৬/০৩/১৮৫৮ খ্রি: তারিখে রায় প্রদান করেন। সেই থেকে ওই মামলার রেকর্ড/নথি কুষ্টিয়ার রেকর্ড রুমেই পড়ে ছিলো- দীর্ঘ ১৬৬ বছর ধরে। কুষ্টিয়ার বর্তমান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিনের উদ্যোগেই ওইসব নথিপত্র নিজ ঠিকানায় প্রেরণ করায় গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের মামলার নথিসহ মোট ৫০৪৯ টি মামলার নথি ঠায় পেলো নিজ ঠিকানায়।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, ‘বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিন স্যার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে আদালতে নানাবিধ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্যোগ ছিলো রেকর্ড রুম সংস্কার। একসময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার সাথে সংযুক্ত মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলায় রূপান্তর হলেও হলেও উক্ত দুই জেলার মামলার নথি কুষ্টিয়ার রেকর্ড রুমেই এতোদিন পড়ে ছিলো। এসব নথির পক্ষগণ মামলার সাথে দাখিলকৃত দলিলসহ অন্যান্য কাগজ নিতে হলে এতোদিন ধরে কুষ্টিয়ায় আসতে হতো। এতে ওই সমস্ত মামলায় সম্পৃক্ত ভুক্তভোগী পক্ষগণের সীমাহিন কষ্ট ও ভোগান্তি ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। 

এসব বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব রুহুল আমিন রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত জজ জনাব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন এবং এবিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। পরে হাইকোর্ট বিভাগ নথি সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়ায় নথিগুলো প্রেরনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। গতকাল বুধবার ট্রাক বোঝাই  করে ৫ হাজার ৪৯টি মামলার নথিগুলি প্রেরন করা হয়। এসময় দুই জেলা আদালতের রেকর্ড কিপার নথি বুঝে নেওয়ার ও বুঝিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ড কিপার জনাব মির্জা শাহ আতিকুর রহমান বেগ জানান, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আজ মেহেরপুরের নথি মেহেরপুর জেলায় প্রেরনের কাজে অংশ নিতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত।

কুষ্টিয়ার জিপি আসম আখতারুজ্জামান মাসুম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, ‘বিচার প্রার্থী জনগনের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আজ থেকে মেহেরপুর জেলার কোন মানুষকে মামলার নথি তুলতে কুষ্টিয়ায় আসতে হবেনা। এমন উদ্যোগ আরো আগে থেকেই নেয়া উচিৎ ছিলো। তবে দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগ গ্রহন করে বর্তমান কুষ্টিয়া সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ দুরদর্শীতার পরিচয় দিলেন।  এতে মেহেরপুরের মানুষের ভোগান্তি লাঘব হলো। 
সর্বশেষ সংবাদ
এত মানুষের রক্ত ও ত্যাগের সাথে বেইমানি করা যাবে না: সিইসি

এত মানুষের রক্ত ও ত্যাগের সাথে বেইমানি করা যাবে না: সিইসি